মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০১৪

ছোটগল্পঃ বাতাসে কাঁঠালচাঁপার সুবাস!

"তারপর কি হলো মতিন ভাই?"

ধোয়া ওঠা সিরামিকের চায়ের কাপে সশব্দ একটা তৃপ্তির চুমুক দিয়ে নামিয়ে রাখলো মতিন। বেশ আয়েশি একটা ভঙ্গি তার। শীতের রাত। বিদ্যুৎহীন একটা গ্রামে যেখানে সূর্যাস্ত মানেই রাত সেখানে রাত দশটায় নদীর পাড়ে বসে চা খাওয়া বিলাসিতাই বলা চলে। মতিনের বাড়ি বেশ ছিমছাম, গ্রামের শেষ প্রান্তে। বাড়ির একেবারে পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী। পূর্ণিমার আলো নদীর জলে প্রতিফলিত হয়ে অপার্থিব এক আবহ সৃষ্টি করেছে। সুমন আর পলাশ একটু আগেও হাঁ করে এই সৌন্দর্য গিলছিল। কিন্তু এখন তাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই এই সৌন্দর্যে। তাদের সমগ্র সত্তা উশখুশ করছে মতিন এর গল্প শোনার জন্যে।

সুমন, মতিনের চাচাতো ভাই। শহুরে ছেলে। গ্রামে খুব একটা আসে নি এর আগে। হঠাৎ কলেজে গ্যাঞ্জাম হওয়ায় অনাকাঙ্খিত একটা লম্বা ছুটি পেয়ে গেছে। তাই বন্ধু পলাশ কে নিয়ে চলে এসেছে গ্রামে মতিন এর কাছে। মতিনের স্ত্রী মাস চারেক হলো মাড়া গেছে। একা একাই থাকে মতিন। সুমন আর পলাশ আসায় সেও ভীষণ খুশি হয়েছে। সারাদিন ওদের নিয়ে বেশ কেটে গেছে মতিনের। পুকুরে জাল দিয়ে মাছ ধরা, সেই মাছ রান্না করা, দুপুরে খাবার পড় গাছতলায় পাটি বিছিয়ে আয়েশি মধ্যাহ্ন নিদ্রা, বিকেলে ওদের গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাতে যেয়ে দিন কখন শেষ হয়ে গেছে টের পায়নি মতিন।

রাতের খাবার পড় মতিন তার অসাধারণ চা বানিয়ে সুমন আর পলাশ কে নিয়ে নদীর পাড়ে বসেছে গল্প করতে। মতিন বেশ সৌখিন মানুষ। নদীর পাড়ে বেশ সুন্দর বসার ব্যাবস্থা করেছে সে মোটা গাছের গুড়ি ফেলে।

"রুপা (মতিনের স্ত্রী) বেঁচে থাকতে অনেক রাত পর্যন্ত আমরা এখানে বসে থাকতাম।" মতিন আবার বলা শুরু করেছে। সুমন আর পলাশ পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে মতিনের দিকে। চাঁদের আলোয় মতিন কে কেমন যেন অন্যরকম লাগছে। সুমন আর পলাশ চোখ ফেরাতে পারছে না।

"তোদের ভাবির একটা উদ্ভট সখ ছিল। প্রতিদিন একটা করে কাঁঠালচাঁপা ফুল এনে দিতে হতো। সে রাতে কাঁঠালচাঁপা ফুল হাতে নিয়ে এখানে বসে থাকতো আর কিছুক্ষন পর পর বুক ভরে ফুলের ঘ্রান নিতো।" আবার একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল মতিন।

সুমন আর পলাশ ভেতরে ভেতরে উশখুশ করলেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে কিছু বলতে পারছিল না। বেশ কিছুক্ষন পর খুক করে একটা কাশি দিলো সুমন। সম্বিৎ ফিরে পেল মতিন।

"ওহ হ্যা, যা বলছিলাম। হঠাৎ একদিন রাতে খুব জ্বর এলো রুপার। রাত যতো বাড়তে থাকলো জ্বর ও সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে যেন বাড়তে থাকলো। সারারাত বসে মাথায় পানি দিলাম, পানি পট্টি দিলাম। জ্বর আর কমলো না। ভোর এর দিকে রুপা আমার হাত চেপে ধরলো। বলে আমাকে শক্ত করে ধরে রাখতে পারবা না? আমি বললাম এই যে রুপা দেখো আমি তোমাকে ধরেই আছি। ও বললো আরও শক্ত করে ধরো। নাহলে আমাকে নিয়ে যাবে। আমি হতবাক হয়ে রুপার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ভাবলাম বুঝি জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকছে। কিন্তু রুপার চোখ দুটো যেন কিছু বলতে চাচ্ছিল আমাকে। কেমন একটা ব্যাকুলতা ছিল ওর চোখে। একটা কিছু না বলা কথা খেলা করছিল ওর নিস্প্রান চোখে যা ও প্রকাশ করে যেতে পাড়েনি। আজ ও আমি বুঝতে পারলাম না কি বলতে চেয়েছিল রুপা। একটা রাতের জ্বর এভাবে একটা মানুষ কে কেড়ে নিয়ে যায়? আমি কেন আরেকটু জোরে ওর হাত চেপে ধরে থাকলাম না।" একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো মতিন এর ভেতর থেকে।

সুমন বা পলাশ কেউ ই মতিন কে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা খুজে পাচ্ছিল না। কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থেকে সুমন বললো-
"চলো মতিন ভাই, ঘরে যাই।"
"তোরা যা। আমি কিছুক্ষন পরে আসছি। এখানে বসে থাকলে কেন যেন আমার মনে হয় রুপা আমার পাশেই আছে।"

আর কিছু বললো না ওরা। উঠে দাঁড়ালো ঘরে যাবার জন্য। হঠাৎ তাদের শিরদাঁড়া বেয়ে যেন একটা ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেলো। বাতাসে কাঁঠালচাঁপার সুবাস!


বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০১৪

ময়ূর এর লেজে এতো চোখের ন্যায় কারুকার্য কোথা হতে এলো?


         

গ্রীক মিথ অনুযায়ী, দেবতা ইনাকাস এর কন্যা ছিল রাজকন্যা আইও। দেবরাজ জিউস এর নারিলিপ্সা এর ব্যাপারটা যারা একটু আধটু মিথ পরেছেন তাদের কাছে অজানা কিছু না। মিথ ঘাঁটলেই অনেক নজির পাওয়া যায়। তো অনেকের মতো রাজকন্যা আইও এর ও প্রেমে পড়ে যান জিউস। প্রতি রাতে স্বপ্নে প্ররোচিত করতে থাকেন আইও কে। কিন্তু বাধা হিসেবে চলে আসেন জিউস এর স্ত্রী হেরা। হেরা ছিলেন প্রচণ্ড ঈর্ষাপরায়ণ। এ ব্যাপারে পড়ে কখনো বলা যাবে। তো হেরার চোখ এড়িয়ে আইও এর কাছে যাওয়ার বুদ্ধি করতে লাগেন দেবরাজ জিউস। একদিন জিউস পুরো পৃথিবীকে কালো মেঘে আচ্ছ্যন্ন করে চলে এলেন আইও’র কাছে। কিন্তু হেরা ও চতুর কম না। হঠাৎ পৃথিবীর প্রকৃতির এই পরিবর্তন এ সন্দেহ যাগে হেরার মনে। হেরা স্বর্গের কোথাও জিউস কে না পেয়ে নেমে আসেন পৃথিবীতে। হেরার হাতে ধরা খাওয়ার ভয়ে জিউস আইও কে বকনা বাছুর বানিয়ে দেন যাতে হেরা বুঝতে না পারে এটা আইও। কিন্তু হেরা ও কম যায় না। বুঝে ফেললো সব। জিউস কে বলল- “এই বকনা বাছুরটি খুব ই সুন্দর। তুমি কি এর কোনও অংশ আমাকে উপহার দেবে?”

বাধ্য হয়ে জিউস আইও কে হেরার হাতে তুলে দিলেন। এবার হেরা বকনা বাছুরটির পাহারার জন্য নিয়োগ দিলেন দেবতা আরগাস পানোপটেস কে যিনি ছিলেন হেরার প্রিয়ভাজন। আরগাস পানোপটেস এর ছিল একশত চোখ। আরগাস এর সবগুলো চোখ কখনো একসাথে ঘুমাতো না।

এবার জিউস বুদ্ধি করতে লাগলো কিভাবে আরগাস পানোপটেস এর হাত থেকে মুক্ত করা যায় আইও কে। তিনি শরণাপন্ন হলেন সুচতুর দেবতা হার্মিস এর। তিনি হার্মিস কে সব বুঝিয়ে বলার পর হার্মিস নেমে গেলেন আরগাস এর কবল থেকে আইও কে উদ্ধারের অভিযানে। হার্মিস রাখালের বেশে পৃথিবীতে এসে সুমধুর সুরে বাশি বাজাতে বাজাতে আরগাস এর কাছে গেলেন। হার্মিস এর বাশির সুরে আরগাস বিমহিত হয়ে হার্মিস কে কাছে ডাকেন। হার্মিস বাশিতে বিভিন্ন সুর শুনিয়ে আরগাস কে ঘুম পড়ানোর চেষ্টা করতে থাকেন কিন্তু আরগাস এর কোনও না কোনও চোখ খোলা থাকেই। এরপর হার্মিস, আরগাস কে দেবতাদের কাহিনি শোনাতে শুরু করলে আরগাস বিরক্ত হয়ে সবগুলো চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে। এই সুযোগ এ হার্মিস হত্যা করে আরগাস কে। এবং উদ্ধার করে নিয়ে আসেন আইও কে। তখন হেরা আরগাস এর চোখ গুলো নিয়ে তার প্রিয় পাখি ময়ূর এর লেজে লাগিয়ে দেন। আর এভাবেই ময়ূর এর লেজে এতো চোখের ন্যায় কারুকার্য।

বি.দ্রঃ এই আইও এর বংশধর হল আমাদের অতিপরিচিত হারকিউলিস।

বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৩

"প্যানডোরা" অনিষ্টের জন্মদাত্রি হতভাগা নারী।



"নারী তুমি যে মানুষ হয়ে উঠনি

পুরুষসমাজ তোমায় মানুষ ভাবতে শিখে নি

তুমি বোকা বলে, তুমি সরল বলে

তুমি নারীই রয়ে গেলে ।"
- - সংগৃহীত।


পৃথিবীতে জাগতিক সকল অনিষ্টের জন্মদাত্রি হিসেবে নারী কেই দেখানো হয়েছে। এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী সবসময় নারী হয়েই থেকেছে, হতে পারেনি মানুষ। তেমনি একটি নিদর্শন গ্রীক মিথ এর "প্যানডোরা"। গ্রীক মিথ অনুসারে মর্তের প্রথম নারী এই প্যানডোরা। 

শিল্পীর তুলিতে প্যানডোরা

পৃথিবীতে আজ যে রোগব্যাধি, ঘৃণা, ক্রোধ, লোভ -লালসা মানব সমাজ কে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে গ্রীক মিথ অনুসারে এ সব ই মর্তের প্রথম নারী প্যানডোরা এর একটুখানি নারীসুলভ কৌতূহলের ফসল। তবে প্যানডোরা কিন্তু দেবতাদের রাজা ( God of The Godes ) জিউস এর অতিমাত্রিক কুটচালের স্বীকার। তবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এ বিষয়টিকে এড়িয়ে বড় করে দেখিয়েছে প্যানডোরা এর নারী সুলভ কৌতূহলকে।  প্যানডোরা কে তুলে ধরেছে জাগতিক অনিষ্টের জন্মদাত্রী হিসেবে। 

তবে প্যানডোরার কাহিনী জানতে হলে আগে জানতে হবে প্রমিথিউস এর কাহিনী। ইচ্ছে আছে প্রমিথিউস কে নিয়ে অন্য সময় লেখার। এখন প্যানডোরা এর কাহিনির প্রয়োজনে কিছুটা ধারনা দিয়ে রাখি। এই প্রমিথিউস ছিলেন মানব প্রেমী এক অসিম সাহসী দেবতা। তিনি টাইটান বা প্রি- অলিম্পিয়ান দেবতা ছিলেন। এই টাইটানদের পরাজিত করেই জিউস দেবতাদের রাজা হন। জিউস ছিলেন মানব বিদ্বেষী দেবতা। যারা মিথ নিয়ে হালকা পরাশুনা করেছে তারা ইতিমদ্ধে জেনে গেছেন জিউস এর নানা নোংরামির কেচ্চা কাহিনী। 

এটা যে সময়ের কাহিনী সেসময়ে পৃথিবীতে মানুষ আগুনের ব্যবহার জানতো না। মানুষ তখন কাঁচা খাবার খেত, বৃষ্টিতে - শীতে অনেক কষ্ট পেত। মানব প্রেমী প্রমিথিউস মানুষের এ কষ্ট দেখে স্বর্গ থেকে আগুন চুরি করে এনে মানুষ কে উপহার দেয়। দেবতারা মানুষকে আগুন দেওয়ার পক্ষপাতি ছিলনা। কারন তারা ভাবত মানুষ আগুন দিয়ে খালি ধ্বংসই করবে। কিন্তু মানব প্রেমী প্রমিথিউস মানুষের কষ্ট দূর করার জন্য মানুষকে আগুন উপহার দেয় এবং এর ব্যবহার শিখিয়ে দেয়। একারনে দেবতারা বিশেষ করে জিউস ভীষণ ভাবে খেপে যান প্রমিথিউস এর উপর। জিউস প্রমিথিউস কে বন্দী করে বেধে রাখলেন এক পাহাড়ের চুরায় এবং শকুন পাঠিয়ে দিলেন। শকুন ঠুকরে ঠুকরে ক্ষত বিক্ষত করতো প্রমিথিউস কে। আবার পরের দিন সেই ক্ষত পূরণ হয়ে যেত এবং শকুন এসে আবার ঠুকরে দিত।  এভাবেই মানব প্রেমের শাস্তি মুখ বুজে সহ্য করতে থাকেন প্রমিথিউস। 

প্রমিথিউস 


প্রমিথিউস কে শাস্তি দেওয়ার পর এবার জিউস মানব জাতিকে শাস্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে। কিন্তু এবার সে অবলম্বন করল একটু কুট কৌশল। জিউস এজন্য দেবী আফ্রোদিতি ও তার স্বামী হেফুস্থস কে ডেকে পাঠালো। হেফুস্থস ছিল স্বর্গের মৃৎ শিল্পী। জিউস হেফুস্থস কে কাদা ও পানি দিয়ে আফ্রোদিতি এর ন্যায় একটি মূর্তি বানাতে নির্দেশ দিলো। হেফুস্থস সাথে সাথে লেগে গেলো মূর্তি নির্মাণে এবং নিমেষেই তৈরি করে ফেললো আফ্রদিতির ন্যায় অসম্ভব সুন্দর এক নারী মূর্তি। হবে না কেন, আফ্রোদিতি যে সৌন্দর্যের দেবী। এবার জিউস এই মূর্তি কে প্রান দিলেন। সাথে সাথে জিউস এর নির্দেশে দেবতা অ্যাপোলো একে দিলো সঙ্গীত, দেবী এথেনা দিলো কাপড়, হারমিস দিলো প্ররচনা। এ কারনে এর নাম রাখা হোলও প্যানডোরা যার অর্থ সর্ব উপহার। সব মিলিয়ে প্যানডোরা পরিনত হোলও অপরুপ সুন্দরি এক রমণীতে। 

এবার জিউস প্যানডোরা কে একটি বাক্স উপহার দিলো যার মধ্যে ভরে দিলো লোভ- লালসা, জরা- জীর্ণ, ক্রোধ, হতাশা। বাক্সটি প্যানডোরা বক্স নামে পরিচিত। প্যানডোরা কে বাক্স উপহার দিয়ে জিউস বলে দিলো বাক্স যাতে না খোলা হয়। প্যানডোরা ও জিউস কে কথা দিলো কখনও খুলবে না বাক্স। এবার জিউস প্যানডোরা কে পৃথিবীর এক জঙ্গলে পাঠিয়ে দিলো যে জায়গা বর্তমানে গ্রিস নামে পরিচিত। পৃথিবীতে পা রাখলো প্রথম নারী। 
 
প্যানডোরা অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সেজে জঙ্গলে একা বসে ছিল। ঐ সময় জঙ্গলের পথ ধরে জাচ্ছিল এপিমেথিউস। প্যানডোরার অতিমানবীয় রূপ বিমোহিত করে তোলে এপিমেথিউস কে। এখানে বলে রাখি এপিমেথিউস ছিলেন মানব প্রেমী প্রমিথিউস এর ভাই। তিনি ছিলেন অত্যন্ত শান্ত শিষ্ট। যাই হোক প্যানডোরার রুপে বিমোহিত হয়ে এপিমেথিউস প্যানডোরা কে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, প্যানডোরা ও রাজি হয়ে যায়। 

প্যানডোরা ও এপিমেথিউস এরপর সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে পৃথিবীর বুকে। কিন্তু ঐ যে কৌতূহল নামক একটা আবেগ আছে যা প্যানডোরা কে বার বার আকর্ষিত করতে থাকে বাক্সটির প্রতি। কিন্তু প্রতিবার ই জিউস কে দেওয়া কথা মনে পড়ে যায় তার। কিন্তু একসময় আর পারে না প্যানডোরা। একদিন এপিমেথিউস যখন বাড়ির বাইরে ছিল তখন প্যানডোরা খুলে ফেলে বাক্স টি। অমনি বাক্স থেকে বেরিয়ে আসে দুঃখ- কষ্ট, রোগ- শোক, লোভ, ঘৃণা এবং ছরিয়ে পড়ে সারা পৃথিবীতে। এভাবেই গ্রীক মিথ মতে প্যানডোরার একটু খানি কৌতূহল এর কারনে সারা পৃথিবীতে নেমে আসে অসান্তির বৃষ্টি যা চলছে এখনো। তবে ভাগ্যিস আশা নামক আবেগটি মানুষের আছে যে কারনে মানুষ আজ ও বেচে আছে সকল অসান্তি উপেক্ষা করে। এভাবেই জিউস সাপ ও মারল লাঠি ও ভাঙল না। সে মানুষ দ্বারা মানুষের ক্ষতি করে দিলো কিন্তু কেও যে তাকে এজন্য দায়ি করবে সে ফাক রাখলো না। 




এভাবেই প্যানডোরা মানব সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলো অনিষ্টের জন্মদাত্রী হিসেবে। আর পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যথার্থ নারীকে যথার্থ নামিয়ে আনল আস্তাকুরে। 


তথ্য সুত্রঃ 



শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০১৩

বেহুলা- ভালোবাসার যুদ্ধে অদম্য সেনানী।

                       ভালোবাসা তোমার ঘরে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসুক
              ইচ্ছেগুলো তোমার ইচ্ছেগুলো জ্যান্ত হয়ে বুকের ভেতর তুমুল নাচুক
                       ভালোবাসা তোমার ঘরে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসুক।।

গান টি তানিম নুর পরিচালিত চলচিত্র ফিরে এসো বেহুলা এর। অনেকেই হয়তো এরি মাঝে দেখে ফেলেছেন এই ভালো মানের চলচিত্র টি। না দেখে থাকলে দেখে নিতে পারেন। যদি ও আমি আসলে এই চলচিত্রটি নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছি না। আমি আলোচনা করবো বেহুলা কে নিয়ে। শিরোনামেই দেখেছেন আমি বেহুলা কে ভালোবাসার যুদ্ধে অদম্য সেনানী হিসেবে উল্লেখ করেছি। এখন কেন বলেছি তার কারন ব্যাখ্যা করতে চাই।


বেহুলা একটি মিথ। আর মিথ এর প্রতি আমার খুব ই আগ্রহ। যখন মহাস্থানগড় দেখতে গিয়েছিলাম তখন ওখানে শুনলাম যে এখানে বেহুলা-লখিন্দরের বাসর ঘর আছে। না দেখে তো আসা যায় না। তখন ও আমি এই বিষয়ে কিছুই জানতাম না। স্থানীয় একজন এর কাছে শুনলাম বেহুলা- লখিন্দরের মিথ। ছোটো ছোট বই ও বিক্রি হয় ওখানে যাতে আপনি এমন মিথ পাবেন। আমিও কিনেছিলাম। তবে ফিরে এসে বেশ ঘাটাঘাটি করি। জানতে পাড়ি এই বেহুলার কাহিনী উঠে এসেছে মনসামঙ্গল কাব্য থেকে। মনসা- মঙ্গল কাব্য মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য নিদর্শন। হরিদাস, বিজয়গুপ্ত, নারায়ন দাস, কেতকা দাস ও খেমনান্দ নামক কবিরা মনসা- মঙ্গল কাব্য রচনা করেন। এখানে ফুটে উঠেছে বেহুলা - লখিন্দরের অসাধারণ কাহিনী।



        বগুড়ায় অবস্থিত বেহুলার বাসর ঘর।

মনসা ছিলেন নারী গর্ভে জন্ম না নেওয়া শিব এর সন্তান। মর্তে বাসুকির কাছে পালিত হয় মনসা। বড় হয়ে জানতে পেরে মনসা শিব এর কাছে যায় এবং কৈলাস এ শিব এর বাড়িতে থাকতে চায়। কিন্তু শিব তার স্ত্রী পারবতির ভয়ে মনসা কে মন্দিরে ফুল এর ডালিতে লুকিয়ে রাখে। কিন্তু পার্বতী দেখে ফেলে এবং মনসা কে তার সতীন মনে করে আঘাত করে তার চোখ নষ্ট করে দেয়। এদিকে রাগান্নিত হয়ে মনসা পার্বতী কে দংসন করে। কিন্তু শিব এর অনুরধে পার্বতী কে আবার বাচিয়ে তোলে। কিন্তু পার্বতীর ইচ্ছায় মনসা কে বনবাস দেওয়া হয়। বনবাসে ব্রম্মা এর বীর্য ধারন করে মনসা নাগ এর জন্ম দেয়। এসময় সে সর্পদেবী হিসেবে বনবাস থেকে ফিরে আসে।


বনবাস ফেরত মনসা নিজের পুজা চালু করার জন্য পিতা শিব এর কাছে অনুরোধ করে। শিব মনসা কে বলে যদি সে চাঁদ সওদাগার কে রাজি করাতে পারে তাহলে পৃথিবীতে তার পুজা চালু হবে। কিন্তু শিব ও দুর্গা ভক্ত চাঁদ সওদাগার কিছুতেই মনসার পুজা করতে রাজি হোলও না। বরং তারিয়ে দেন মনসা কে। ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মনসা। চম্পকনগরে সাপের উপদ্রপ বেরে যায়। সাপের কামরে মাড়া যায় চাঁদ সওদাগারের ছয় ছেলে। ডুবে যায় চাঁদ এর বাণিজ্য তরী। সর্বস্বান্ত হয়ে যায় চাঁদ। তারপর ও রাজি হয় না মনসার পুজা দিতে।


তার পর ও আস্থা হারান না চাঁদ। এরপর চাঁদ সওদাগরের পুত্র লখিন্দর ও তার ব্যবসায়ীক সতীর্থ সাহার কন্যা বেহুলার জন্ম হয় সমসাময়ীক কালে। দুটি শিশুই একসাথে বেড়ে ওঠে এবং একে অপরের জন্য সম্পুর্ণ উপযুক্ত বলে গণ্য হয়। কিন্তু জ্যোতিষী বলেন বেহুলার সাথে লখিন্দরের বিয়ে হলে বাসর ঘরে সাপের দংসনে লখিন্দরের মৃত্যু হবে। চাঁদ তবু ও বেহুলা-লখিন্দরের বিয়ে দেন এবং তাদের জন্য সুরক্ষিত একটি বাসর ঘর বানান কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না। কোনও এক ফাক দিয়ে সাপ ঢুকে পরে এবং লখিন্দর কে দংসন করে। ভেঙ্গে পরে চাঁদ। কিন্তু তবু রাজি হয় না মনসার পুজা দিতে।


তৎকালীন সময়ের নিয়ম অনুসারে সাপে দংসন করা লাশ ভেলায় করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হত যদি কোনভাবে ফিরে আসে সেই আসায়। তেমনি ভাসিয়ে দেওয়া হয় লখিন্দরের লাশ। কিন্তু স্বামী শোকে অন্ধ বেহুলা ও ভেলায় ভেসে পরে। ভাসতে থাকে তারা ছয় মাস ধরে এবং গ্রামের পর গ্রাম পাড়ি দিতে থাকে। এই অবস্থায় মৃতদেহ পঁচে যেতে শুরু করে এবং গ্রামবাসীরা তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে করতে থাকে। বেহুলা মনসার কাছে প্রার্থনা অব্যাহত রাখে। তবে মনসা ভেলাটিকেই কেবল ভাসিয়ে রাখতে সাহায্য করে।


একসময় ভেলাটি মনসার পালক মাতা নিতার কাছে আসে। তিনি নদীতীরে ধোপার কাজ করার সময় ভেলাটি ভূমি স্পর্শ করে। তিনি মনসার কাছে বেহুলার নিরবচ্ছিন্ন প্রার্থনা দেখে বেহুলাকে তার কাছে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে চোখের পলকে বেহুলা ও মৃত লখিন্দরকে স্বর্গে পৌছে দেন। স্বর্গে বেহুলা নেচে- গেয়ে দেবতাদের খুশি করেন। দেবতারা মনসা কে অনুরধ করেন লখিন্দর কে বাচিয়ে তোলার জন্য। কিন্তু মনসা বেহুলা কে শর্ত দেয় সে যদি চাঁদ সওদাগার কে মনসার পুঁজা দিতে রাজি করাতে পারে তাহলে লখিন্দর কে বাচিয়ে তুলবে। বেহুলা কথা দেয় সে চাঁদ সওদাগার কে রাজি করাবে। খুশি হয়ে মনসা লখিন্দর এবং চাঁদ এর বাকি ছয় ছেলে কে বাচিয়ে তোলে ও চাঁদ এর সকল সম্পত্তি ফেরত দেয়। বেহুলা এসব নিয়ে নিতার সাথে মর্তে ফিরে আসে।

সব ফিরে পেয়ে চাঁদ খুশি হয়ে ওঠে এবং বেহুলার অনুরোধে সে মনসার পুজা দিতে রাজি হয়। তবে সব সত্তে ও চাঁদ ভুলে যায় নি দেবী মনসা তাকে কি পরিমান কষ্ট দিয়েছে। তাই তিনি মনসার দিকে না তাকিয়ে বাম হাতে ফুল ছুরে দেন। সেই থেকে মর্তে শুরু হয় দেবী মনসার পুজা।


তো দেখতেই পাচ্ছেন কতটা কষ্ট করে বেহুলা তার প্রিয় স্বামী কে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এজন্নেই আমি বেহুলা কে ভালোবাসার যুদ্ধে অদম্য সেনানী হিসেবে অবিহিত করেছি। নিজের ভালোবাসার মানুষ কে বাচিয়ে তোলার এমন অদম্য চেষ্টার নিদর্শন আর কইটা পাবেন?


তথ্য সুত্রঃ
১. http://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B9%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%BE
২. মনসা মঙ্গল কাব্য






বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

হেলেন- এক সৌন্দর্যের সর্বগ্রাসী শোকগাথা।

হেলেন, যাকে আমরা ট্রয় এর হেলেন হিসেবেই বেশি চিনি, গ্রিক ও রোমান পুরান অনুযায়ী তিনি ছিলেন মর্তের সেরা সুন্দরি। তবে তার সৌন্দর্য এতটাই সর্বগ্রাসী ছিল যে ইতিহাসের অনেক উপকরন সৃষ্টি করে দিয়েছে। কিছু কিছু রূপবতী রমণী এতটা রূপবতী না হলে হয়তো পৃথিবীর ইতিহাস অন্যরকম হতে পারতো। 

          

হেলেন এর খোজ প্রথম পাওয়া যায় মহাকবি হোমার এর মহাকাব্য ইলিয়াড ও অডিসি তে। গ্রিক পুরান মতে হেলেন হলেন দেবতাদের রাজা জিউস এর সন্তান। হেলেন সেই সময়ের মিথ যখন যেকোনো বিষয় কেই দেবতাদের সাথে সংজুক্ত করা হতো। যেমন করা হয়েছে হেলেন এর বেলায়। পুরান অনুযায়ী স্পারটান রাজা টিনডেরিয়াস এর স্ত্রী লিডা ও জিউসের অবৈধ সম্পর্কের ফসল এই প্রচণ্ড সুন্দরি হেলেন। জিউস রাজহাঁস সেজে আসেন এবং মিলিত হন লিডার সাথে। মিথ যাদের ভালো লাগে এবং মিথ নিয়ে যারা একটু ঘাটাঘাটি করে থাকেন তারা জেনে থাকবেন জিউস দেবতাদের রাজা হলেও মর্তে তার সন্তানের অভাব নেই।

হেলেন যখন বড় হতে থাকেন তার সৌন্দর্যের মহিমা চারিদিকে ছরিয়ে পড়তে থাকে। আকর্ষিত হতে থাকে প্রচুর পুরুষ। আর এ আকর্ষণে  থেসিয়াস অপহরন করে হেলেন কে পুরান মতে যখন হেলেন এর বয়স মাত্র দশ। থেসিয়াস ও পিরিথাস ছিলেন এথেন্স এর দুই দেবপুত্র। দেবতার পুত্র হওায় তারা দুজন চিন্তা করেন তাদের স্বর্গীয় স্ত্রী দরকার। আর তাই থেসিয়াস পছন্দ করে হেলেন কে আর পিরিথাস পছন্দ করেন হাডেস এর স্ত্রী পারসিফন কে। হেলেন এবং পারসিফন দুজনেই জিউস এর কন্যা। থেসিয়াস ও পিরিথাস একে অপরকে নিজেদের লক্ষ্য পুরনের জন্য সাহায্য করেন। প্রথমে তারা অপহরন করেন হেলেন কে। এরপর হেলেন কে থেসিয়াস এর মায়ের কাছে রেখে তারা যান পারসিফন কে অপহরন করতে। এদিকে পারসিফন এর স্বামী হাডেস বুঝতে পেরে  থেসিয়াস ও পিরিথাস কে আমন্ত্রন জানান এবং তাদের সম্মানে এক ভোজের আয়জন করেন। যখনই থেসিয়াস ও পিরিথাস খেতে বসেন তখনি অনেক সাপ এসে তাদের পায়ে জরিয়ে যায় এবং তাদের আটকে ফেলে। আর এদিকে এই সুযোগে হেলেন এর দুই ভাই কাস্টর ও পল্লাক্স তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। 

হেলেন কে অপহরন করছে থেসিয়াস। 

এরপর রাজা টিনডেরিয়াস যখন হেলেন এর বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তখন নানান জায়গা থেকে অনেক রাজা, রাজপুত্র হেলেন এর পানিপ্রার্থী হন। মাইসেনিয়ান স্পারটা এর রাজা মেনেলাস তাদের মধ্যে অন্নতম। যদিয়ও তিনি সরাসরি উপস্থিত না হয়ে তার ভাই আগামেনন কে পাঠান। আগামেনন ছিল মাইসেনিয়া এর রাজা। হেলেন এর পিতা মেনেলাস কে তার কন্যার জন্য নির্বাচিত করেন। মেনেলাস এর সাথে বিয়ে হয় হেলেন এর। মেনেলাস হেলেন এর চাইতে ৪০ বছরে বড় হওায় হেলেন কখনোই ভালবাসতে পারেনি মেনেলাস কে। কিন্তু মেনেলাস প্রচণ্ড ভালবাসতেন হেলেন কে। এজন্য হেলেন বেশিরভাগ সময় ই উদাসীন থাকতেন। মেনেলাস সবসময় চেষ্টা করতেন হেলেন কে হাসিখুসি রাখার।

এভাবে চলতে থাকে তাদের জীবন।এমন সময় ব্যাবসা করার জন্য ট্রয় (বর্তমান তুরস্ক) এর রাজপুত্র হেক্টর ও প্যারিস আসেন স্পারটায়। ট্রয় ও স্পারটা ছিল পাশাপাশি দুটো দেশ। মাঝখানে ছিল আজিয়ান সমুদ্র। 
স্পার্টার রাজা মেনিলাস প্যারিস ও হেক্টরকে সাদরে আমন্ত্রন জানায়। তাদের আগমনে রাজ্যকে চমৎকারভাবে সাজানো হয়। নৈশভোজের বিপুল আয়োজন করে প্যারিস ও হেক্টরকে সবার সঙ্গেই পরিচয় করিয়ে দেন রাজা মেনিলাস। এক পর্যায়ে হেলেনের সঙ্গে পরিচয় ঘটে ট্রয় এর রাজপুত্র প্যারিসের। ব্যবসায়িক আলোচনার জন্য স্পার্টায় বিশদিন থাকার প্রয়োজন হয়ে পড়ে প্যাসিস ও হেক্টরের। হেক্টর ও মেনিলাস সবসময় ব্যস্ত থাকতেন ব্যবসা-বাণিজ্যের চুক্তি নিয়ে। আর এদিকে গোপনে প্যারিস দেখা করতেন হেলেনের সঙ্গে। প্যারিসের চেহারা, গায়ের গড়ন, শরীর কাঠামো সবকিছুই হেলেনকে বিমোহিত করে, প্রথমে রাজি না থাকলেও আস্তে আস্তে প্যারিসের প্রতি প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েন হেলেন। 

হেলেন ও প্যারিস

অবশেষে সময় হয়ে যায় হেক্টর ও প্যারিস এর ট্রয়ে ফিরে যাবার। তাদের বিদায় উপলক্ষে রাজা মেনিলাসের নৈশ ভোজের আয়োজন করেন মহা সমারোহে। ভোর হলেই তারা রওনা দেবেন ট্রয়ের উদ্দেশে। রাজা মেনিলাসের আপ্যায়নের কোনো কমতি নেই। খাবার-দাবার আর সুন্দরী রমনীদের নাচের দৃশ্য সাজিয়েছে শেষ নৈশভোজ। নর-নারী, প্রহরী ও হেক্টর, রাজা ও ট্রয়ের অতিথিরা যখন আমোদ-প্রমোদ আর নাচ-গান নিয়ে ব্যস্ত তখন প্যারিস গোপনে চুপিসারে যান হেলেনের ঘরে।হেলেন কে নিয়ে আসেন ও লুকিয়ে রাখেন জাহাজে। এজিয়ান সাগরের মাঝপথে এসে প্যারিস হেক্টরকে বলেন, হেলেন তাদের সঙ্গে এসেছেন। প্যারিসের কথা শুনে অবাক হয়ে যান হেক্টর! রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে চটে যায় প্যারিসের ওপর। নাবিকদের বলে জাহাজ স্পার্টার দিকে ঘুরাতে। কিন্তু প্যারিসের অনুরোধে আর ক্রন্দনে হেক্টর নিজের মত পরিবর্তন করেন।


এদিকে স্পার্টার রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে প্যারিস হেলেনকে অপহরণ করে ট্রয়ে নিয়ে গেছে। মেনিলাস পাগলের মতো হয়ে সাহায্যের জন্য হাত বাড়ান আপন ভাই আর্পসের রাজা আগামেননের। আগামেনন গ্রিসের সম্মান ফিরিয়ে আনার জন্য গ্রিসের সব রাজাকে অনুরোধ জানান। প্রায় ১ হাজার জাহাজ নিয়ে ট্রয়ের উদ্দেশে রওনা দেয় গ্রিসবাসী। 

পলায়নরত প্যারিস ও হেলেন


এদিকে ট্রয় এ সুখে শান্তিতে দিন কাটছিল হেলেন ও প্যারিস এর। ট্রয় নগরিতে উৎসবের ঘটা পরে যায় হেলেন এর আগমন উপলক্ষে। কিন্তু এ আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হোলও না। কিছুদিনের মদ্ধেই ট্রয় এর আকাশে ঘনিয়ে এলো বিপদের কালো মেঘ। হেক্টর ও তার পিতা দেখতে পান হাজার হাজার জাহাজ নিয়ে গ্রিকরা ধেয়ে আসছে ট্রয়ের দিকে। হঠাৎ রাজ্যময় বিপদ ঘণ্টা বাজতে থাকে। রাজ্যের প্রজারা-বিপদ সংকেতে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। ভয় পেয়ে যায় হেলেন।  রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যেতে চান ট্রয় থেকে। কিন্তু ধরা পরে যান হেক্টর এর হাতে। হেক্টর তাকে সাহস যোগালে হেলেন থেকে যায়। 

জাহাজ থেকে সর্বপ্রথম নামেন গ্রিকবীর একলিস। নেমেই যুদ্ধ শুরু করেন একলিস ও তার সঙ্গীরা। প্রথম যুদ্ধেই ট্রয়নগরীর বন্দর দখল করেন নেয় গ্রিকরা। এভাবে টানা ১০ বছর বন্দর ও রাজ্য অবরোধ করে রাখে গ্রিকরা। বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধে নিহত হয় একলিসের ভাই উইরোরাস, প্যারিসের বড় ভাই ট্রয়বীর হেক্টর ও নাম না জানা উভয়পক্ষের হাজারও যোদ্ধা। যুদ্ধে সহজে জয়লাভ না করতে পেরে গ্রিকরা প্রতারণার আশ্রয় নেয়। তৈরি করে বিশাল আকৃতির ঘোড়া। যার নাম ট্রোজেন হর্স। ঘোড়ার মধ্যে লুকিয়ে রাখে শত শত সৈন্য। উপহার হিসেবে পাঠায় ট্রয় রাজার কাছে। রাজ্যের বাইরে লুকিয়ে থাকে গ্রিকরা কিন্তু এসবই অজানা থাকে ট্রয়বাসীর কাছে।

গ্রীকদের ট্রয় নগরিতে পাঠানো ট্রোজান হর্স। 


মহা-আনন্দে আর উৎসাহে ঘোড়াটিকে রাজ্যের ভেতরে নেয় ট্রয়বাসী। কিন্তু বিধি বাম, গভীর রাতে ঘোড়া থেকে বের হয়ে ট্রয়বাসীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায় গ্রিকরা। গ্রিক সৈন্যরা ট্রয় রাজ্যে ধরিয়ে দেয় আগুন। মুহূর্তের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে ট্রয় নগর। আগুনে পুড়ে হাজার হাজার সৈন্য আর নিরীহ নাগরিক মারা যায়। একলিস ছুটে যায় হেলেনকে বাঁচানোর আশায়; কিন্তু প্যারিস তীর বিদ্ধ করে মেরে ফেলে একলিসকে। 
এদিকে এক পর্যায়ে প্যারিস ও মাড়া যায়। একসময় শেষ হয় যুদ্ধ। মেনিলাস ফিরে চলে হেলেন কে নিয়ে। কিন্তু দীর্ঘ দশ বছর ধরে চলা এ যুদ্ধ তছনছ করে দিয়েছিল ট্রয় নগরীকে। কিন্তু এই যে এত যুদ্ধ এক হেলেন কে নিয়ে। কেও কি সুখী হতে পেরছিল হেলেন কে নিয়ে? তাই হেলেন কে নিয়ে শোকগাথা লেখা হয়েছে প্রচুর। তৈরি হয়েছে প্রচুর নাটক সিনেমা। যারা হেলেন বিষয়ে আগ্রহী তারা হেলেন মুভিটি দেখে নিতে পারেন।


তথ্য সুত্রঃ 
১. http://en.wikipedia.org/wiki/Helen_of_Troy
২. http://ancienthistory.about.com/cs/troyilium/a/helenoftroybasc.htm
৩. http://www.stanford.edu/~plomio/history.html
৪. The movi "Troy" directed by Wolfgang Petersen.

বি. দ্রঃ সকল ছবি গুগল থেকে সংগৃহীত।


সোমবার, ২২ জুলাই, ২০১৩

ক্লিওপেট্রা- সৌন্দর্যের রানী।

 নারী হেসে ওঠার আগে 
পৃথিবী ছিল বিষণ্ণ
বাগান ছিল জঙ্গল
আর পুরুষ ছিল সন্ন্যাসী।।

শতাব্দীর পর শতাব্দী সৌন্দর্য পুজারিদের অন্যতম উপাসনা যেই নারীকে নিয়ে, যার সৌন্দর্যের মায়াজালে আটকা পরেছে অনেক বাঘা বাঘা মানুষ সে আর কেও না, রানী ক্লিওপেট্রা। এই একটি মহিলাকে নিয়ে যুগের পর যুগ ধরে অনেক বড় বড় সাহিত্যিক লিখে চলেছেন নানান উপাখ্যান। কেও লিখেছেন উপন্যাস, কেও গল্প, কেও কবিতা আবার কেও বা অমিত্রাক্ষর ছন্দ। এই তালিকায় যেমন আছে সেক্সপিয়ার, জর্জ বার্নড শ, হেনরি রাইডার হ্যাঁগারড এর মতো মহামহিম সাহিত্যিক, তেমনি আছে ড্রাইডেন প্লুটার্ক, ড্যানিয়েল সহ আরও অনেক সাহিত্যিক। এদের সবাই ক্লিওপেট্রার চারিত্রিক বিভিন্ন রুপ নিয়ে লিখেছেন তাদের উপাখ্যান, তবে সবাই চেষ্টা করেছেন ক্লিওপেট্রার ঐতিহাসিক অবস্থান যথাযথ রাখার। যেমন সেক্সপিয়ার তার এন্টোনিয়ও ক্লিওপেট্রা উপন্যাসে ধারালো লেখনির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন ক্লিওপেট্রার রূপ সেই সাথে তুলে ধরেছেন এন্টোনিয়ও ও ক্লিওপেট্রার রোম্যানটিসিসম। অন্নদিকে জর্জ বার্নড শ তার সিজার ক্লিওপেট্রা উপন্যাসে সিজার এবং ক্লিওপেট্রার রোম্যানটিসিসম তুলে ধরেছেন। তবে হেনরি রাইডার হ্যাঁগারড তার উপন্যাস ক্লিওপেট্রা তে অসাধারণ ভাবে তুলে ধরেছেন ক্লিওপেট্রার ব্যাক্তিত্ব, উচ্চাভিলাস ও কিছুটা নারী সুলভ অসহায়ত্ব। 

 তবে একটা মজার বিষয় হোলও যে ক্লিওপেট্রা নিয়ে এত আলোচনা তার নাম কিন্তু সপ্তম ক্লিওপেট্রা। তার আগেও তাদের বংশেই আরও ছয় জন ক্লিওপেট্রার আবির্ভাব হয়েছিল, কিন্তু তারা কেও ই পাদপ্রদীপ এর আলয় আসতে পারে নি। তাই তাদের নিয়ে আলোচনা ও হয় না। আমাদের এই সপ্তম ক্লিওপেট্রা ছিলেন দ্বাদশ টলেমী ও পঞ্চম ক্লিওপেট্রার সন্তান। তিনি ছিলেন মিশরের মেসিডোনিয়ান সম্রাজ্জের শেষ সম্রাজ্ঞী। আলেকজেন্ডার এর হাত ধরে মিশরে ৩২৩ খ্রি. পূর্বাব্দে যে মেসিডোনিয়ান সম্রাজ্জের গোঁড়া পত্তন হয় তার শেষ হয় এই সপ্তম ক্লিওপেট্রার সময়। 


আলেকজেন্ডার মিশর দখল করার পর তার সেনাপতি প্রথম টলেমী মিশরের দায়িত্ব হাতে নেন এবং মিশরের রাজা নিজুক্ত হন। এরপর প্রায় ৩০০ বছর তিনি ও তার বংশধরেরা এই  মেসিডোনিয়ান সম্রাজ্জের পরিচালনা করেন। সুবর্ণ সময়ে এই এই মেসিডোনিয়া বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর শক্তি ছিল।


খ্রি. পূর্ব ৫১ শতাব্দীতে ক্লিওপেট্রার পিতা দ্বাদশ টলেমী যখন মাড়া যান ক্লিওপেট্রার বয়স তখন মাত্র ১৮ এবং তার ভাই ত্রয়োদশ টলেমীর বয়স মাত্র ১০। এসময় তারা দুই ভাই বোন বিয়ে করে ও দেশ পরিচালনা শুরু করে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের তারা করতে থাকে। এসময় মিশরের অর্থনীতি একেবারেই ভেঙ্গে পরে। একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে থাকে। সাথে আসে ভয়াবহ বন্যা। সেই সাথে ত্রয়োদশ টলেমী ও ক্লিওপেট্রার মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে। 


এরপর ক্লিওপেট্রা সিরিয়া তে চলে যায় এবং সেখানে নিজস্ব একটি সেনাবাহিনী গঠন করে এবং নিজেকে মুকুটের একমাত্র দাবীদার ঘোষণা করে। মিশরে ফিরে এসে ক্লিওপেট্রা তার ভাই ত্রয়োদশ টলেমী এর সাথে রাজ্যের পূর্বাংশে পেলুসিয়াম নামক স্থানে মুখোমুখি হন। এদিকে তৎকালীন সময়ে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার ও পম্পেই কে খুজতে মিশরে এসে পৌঁছান। কেননা পম্পেই সিজার এর কাছে পরাজিত হয়ে মিশরে পালিয়ে আসেন এবং টলেমীর নির্দেশে খুন হন। তো সিজার মিশরে এসেই ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তার প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করেন এবং ক্লিওপেট্রার বাহিনির সাথে যুক্ত হয়ে টলেমীকে পরাজিত করেন ও ক্লিওপেট্রা কে মিশরের একচ্ছত্র সম্রাজ্ঞী হিসেবে ঘোষণা করেন।জুলিয়াস সিজার ও ক্লিওপেট্রার একটি পুত্র সন্তান হয় ক্লিওপেট্রা যার নাম রাখেন সিজারিয়ান যার অর্থ ছোট সিজার। যদিও সন্দেহ আছে সিজারিয়ান আদৌ জুলিয়াস সিজার এর সন্তান কিনা? 



ক্লিওপেট্রা সিজার কে তার উত্তরাধিকার দেওয়ার অনুরোধ করে কিন্তু সিজার রাজি হয় না। সিজার অকটভিয়ান কে তার উত্তরাধিকার নির্বাচিত
করেন।খ্রি. পূর্ব ৪০ অব্দে জুলিয়াস সিজার নিহত হন। এরপর রোম শাসন বাবস্থায় যে শূন্যতার সৃষ্টি হয় সে সময় হাল ধরেন মার্ক এন্টোনি। এর পর মার্ক এন্টোনি ও ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্যের মায়া জালে আবদ্ধ হন। ভালবেশে ফেলেন ক্লিওপেট্রা কে। বিয়ে ও করেন। তারা তিনটি সন্তান জন্ম দেয়।

এ পর্যায়ে এসে কাহিনী খুব ই দুঃখজনক। এক যুদ্ধ ক্ষেত্রে এন্টোনি কে মিথ্যে খবর দেওয়া হয় যে ক্লিওপেট্রা খুন হয়েছে। প্রচণ্ড দুঃখে এন্টোনি আত্মহত্যা করেন। এই খবর পেয়ে ক্লিওপেট্রা ও আত্মহত্যা করেন নিজের কপালে মিশরীয় গোখরো সাপের ছোবল নিয়ে। যদিও ক্লিওপেট্রার মৃত্যু নিয়ে কিছু সন্দেহ থেকে যায়। অনেকের মতে ক্লিওপেট্রা আত্মহত্যা করেন নি। তাকে হত্যা করা হয়। হারমেসিস নামক মিসরীয় রাজবংশের এক সদস্য তাকে হত্যা করেন। সে আরেক বিশাল ইতিহাস। হেনরি রাইডার হ্যাঁগারড তার ক্লিওপেট্রা উপন্যাসে এই কাহিনী ফুটিয়ে তুলেছেন। 



ক্লিওপেট্রার জীবন বা সৌন্দর্য শুধু মাত্র ঐতিহাসিকদের বা সাহিত্যিক দের ই আকর্ষণ করে না, সাধারন মানুষকেও আকর্ষণ করে প্রবল ভাবে। অনেক গান, কবিতা রচিত হয়েছে এই ক্লিওপেট্রা কে নিয়ে। হয়েছে বেশ কয়েকটি সিনেমা। যা মধ্যে অন্নতম হোলও এলিজাবেথ টেলর অভিনিত ক্লিওপেট্রা। ক্লিওপেট্রার প্রতি মানুষের আকর্ষণ থাকবে যুগের পর যুগ যতদিন পৃথিবীতে থাকবে সৌন্দর্য পুজারিরা। তাদের উপাসনা চলতেই থাকবে। তাছারা ইতিহাসে ক্লিওপেট্রার অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন নারী হয়েও তিনি যে বুদ্ধিমত্তা ও সাহসের সাথে দেশ পরিচালনা করে গেছেন তা আসলেই বিস্ময়কর।


তথ্য সুত্রঃ 

১. http://en.wikipedia.org/wiki/Cleopatra
২. http://www.biography.com/people/cleopatra-vii-9250984
৩. সিজার অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা- জর্জ বার্নড শ।
৪. এন্টোনিয়ও অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা- সেক্সপিয়ার।
৫. ক্লিওপেট্রা- হেনরি রাইডার হ্যাঁগারড 

বি.দ্রঃ সকল ছবি গুগল থেকে ধার করা।
 


রবিবার, ২১ জুলাই, ২০১৩

রহস্যময় রানি নেফারতিতি।

ব্যান্ড দল মেঘদল এর একটি গান আমাকে মাঝে মাঝেই বিমোহিত করে রাখে। গানটির কথা ও সুরের অপূর্ব মায়াজাল আমাকে যেন আমার থেকে বের করে নিয়ে যায়। গানটি করা হয়েছে মিসরীয় রানি নেফারতিতি কে নিয়ে। গানটির শিরোনাম "নেফারতিতি"। গানটির দু'লাইন তুলে ধরলাম এখানে-
                    যাচ্ছো চলে নেফারতিতি
                   বিষন্ন চুল উড়ছে হাওয়ায়।

পুরো গানটির লিরিক এখানে পাবেন।  গানটি নিয়ন আলোয় স্বাগতম অ্যালবাম এ আছে। গানটি যতই শুনি আরও শুনতে ইচ্ছে করে। কেমন একটা যেন মায়া আছে। ঠিক যেমন মায়া আছে নেফারতিতি নামটির মধ্যে। কয়েক হাজার বছর ধরে এই নামটি মানুষ কে আলোড়িত করে রেখেছে। 

মিসরীয় সভ্যতা আগাগোড়াই একটা রহস্যে ঘেরা সভ্যতা। আর সেই রহস্যে ঘেরা সভ্যতার রানি ছিলেই এই নেফারতিতি। তাহলে বুঝতেই পারছেন ইনি নিজে কতটা রহস্যময় ছিলেন। নেফারতিতি ছিলেন প্রচণ্ড সুন্দরি একজন মহিলা। তার সৌন্দর্য নিয়ে লেখা হয়েছে অসংখ্য গল্প কবিতা।
         
                   
বার্লিন এর Neues Museum এ রাখা নেফারতিতির আবক্ষ মূর্তি


এই নেফারতিতি নিয়ে এখনো অনেক রহস্য রয়ে গেছে। তিনি ঠিক কোথায় জন্মেছিলেন এখনো সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়ে গেছে। কারো কারো মতে তিনি আখমিম শহরে জন্ম গ্রহন করেছিলেন আবার কেও কেও বলে তিনি মিশরের বাইরে জন্মগ্রহন করেছিলেন। বেশিরভাগ এর মত হোলও নেফারতিতি ছিলেন আয় এর কন্যা। আয় ছিলেন ফারাও এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি তিন তিন জন ফারাও এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলান এবং ধরা হয় তিনি ফারাও তুতেনখামেন এর রাজ্যের অন্নতম শক্তি ছিলেন। এই তুতেনখামেন আবার আরেক বিস্ময়।

নেফারতিতি বিয়ে করেন ফারাও তৃতীয় আমেনহটেপ এর সন্তান আখেনাতেন কে যিনি পরবর্তী ফারাও হিসেবে রাজত্ব করেন চতুর্থ আমেনহটেপ হিসেবে। ধারনা করা হয় নেফারতিতি ও আখেনাতেন এর মধ্যে ছিল ভালবাসার কোনও কমতি ছিল না যা সাধারনত মিসরীয় ফারাও দের মধ্যে খুজে পাওয়া যায় না। তারা দুজনে মিলে প্রায় খৃস্ট পূর্ব ১৩৫৩ থেকে ১৩৩৬ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। 

                          
নেফারতিতি, আখেনাতেন ও তাদের সন্তানরা।

নেফারতিতি ও আখেনাতেন মিলে মিশরে সূর্য পুজা এর গোড়াপত্তন করেন। তারা ছিলেন সূর্য দেবতা আতেন ( Aten ) এর পুজারি। তারা দুজনে মিলে এই সূর্য পূজার নতুন এক ধর্মের প্রচলন করেন এবং তারা দুজন ছিলেন এই ধর্মের কাণ্ডারি। তাদের মাদ্ধমেই সাধারন মানুষ সূর্য দেবতার সাথে সংযোগ স্থাপন করতো। তারা একটি শহর ও প্রতিস্থা করেন এই সূর্য দেবের প্রতি শ্রদ্ধা নিদর্শন করে যেই শহরটি বর্তমানে আমারনা নামে পরিচিত। এই শহরে খোলা আকাশের নিচে এখনো কিছু সূর্য দেবের উপাসনালয় আছে।

                 
 
সূর্য দেবতার উপাসনারত নেফারতিতি।

রহস্যে ঘেরা এই রানি নেফারতিতির রহস্যময় জীবনের মতো তার মৃত্যু ও রহস্যময়। ঠিক কবে তার মৃত্যু হয়েছিল জানা যায় নি। ঠিক কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছিল তাও জানা যায় নি। আখেনাতেন এর রাজত্তের চতুর্দশ তম বছর থেকে হঠাৎ করে হারিয়ে যান এই রানি। এরপর আর তার সম্পর্কে কোনও তথ্য পাওয়া যায় নি। কেও কেও ধারনা করে এরপর তিনি মাড়া যান। আবার কোনও কোনও বিশেষজ্ঞের মতে এসময় তিনি এতই ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন যে পুরুষের মতো পোশাক পড়তে শুরু করেন। একারনে তাকে আর খুজে পাওয়া যায় নি। এমন কি নেফারতিতির কোনও মমি ও খুজে পাওয়া যায় নি এখন পর্যন্ত।

ইতিহাসে নেফারতিতি সৌন্দর্যের রানি হিসেবেই স্বীকৃত। যেমন আলোচিত মিসরের ই ক্লিওপেট্রা, ট্রয় নগরীর হেলেন। জানিনা আরও কতদিন নেফারতিতি রহস্যময়তার মদ্ধেই থাকবেন। তিনি এক অদ্ভুত মায়াজাল বিছিয়ে রেখেছেন যা ক্রমশই টানে। তবে কিছু কিছু রহস্য মনে হয় রহস্য থাকাটাই শ্রেয়। কারন মায়াজালে যদি মায়া না থাকে তাহলে সেটা শুধুই জাল হয়ে থাকে। 

লেখাটি শুরু করেছিলাম মেঘদল এর নেফারতিতি গানটির দু'টি লাইন দিয়ে, শেষ ও করতে চাই একি গানের আরও কয়েকটি লাইন দিয়ে-

                            কিছু সূর্যবন্দী মেঘ
                           কিছু বিস্মরনের নদী
                বয়ে যায় তোমার আত্মার কাছাকাছি
                               নেফারতিতি


তথ্য সুত্রঃ
১. http://en.wikipedia.org/wiki/Nefertiti
২. http://www.biography.com/people/nefertiti-9421166

বি.দ্রঃ সকল ছবি গুগল থেকে ধার করা।