বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৩

"প্যানডোরা" অনিষ্টের জন্মদাত্রি হতভাগা নারী।



"নারী তুমি যে মানুষ হয়ে উঠনি

পুরুষসমাজ তোমায় মানুষ ভাবতে শিখে নি

তুমি বোকা বলে, তুমি সরল বলে

তুমি নারীই রয়ে গেলে ।"
- - সংগৃহীত।


পৃথিবীতে জাগতিক সকল অনিষ্টের জন্মদাত্রি হিসেবে নারী কেই দেখানো হয়েছে। এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী সবসময় নারী হয়েই থেকেছে, হতে পারেনি মানুষ। তেমনি একটি নিদর্শন গ্রীক মিথ এর "প্যানডোরা"। গ্রীক মিথ অনুসারে মর্তের প্রথম নারী এই প্যানডোরা। 

শিল্পীর তুলিতে প্যানডোরা

পৃথিবীতে আজ যে রোগব্যাধি, ঘৃণা, ক্রোধ, লোভ -লালসা মানব সমাজ কে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে গ্রীক মিথ অনুসারে এ সব ই মর্তের প্রথম নারী প্যানডোরা এর একটুখানি নারীসুলভ কৌতূহলের ফসল। তবে প্যানডোরা কিন্তু দেবতাদের রাজা ( God of The Godes ) জিউস এর অতিমাত্রিক কুটচালের স্বীকার। তবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এ বিষয়টিকে এড়িয়ে বড় করে দেখিয়েছে প্যানডোরা এর নারী সুলভ কৌতূহলকে।  প্যানডোরা কে তুলে ধরেছে জাগতিক অনিষ্টের জন্মদাত্রী হিসেবে। 

তবে প্যানডোরার কাহিনী জানতে হলে আগে জানতে হবে প্রমিথিউস এর কাহিনী। ইচ্ছে আছে প্রমিথিউস কে নিয়ে অন্য সময় লেখার। এখন প্যানডোরা এর কাহিনির প্রয়োজনে কিছুটা ধারনা দিয়ে রাখি। এই প্রমিথিউস ছিলেন মানব প্রেমী এক অসিম সাহসী দেবতা। তিনি টাইটান বা প্রি- অলিম্পিয়ান দেবতা ছিলেন। এই টাইটানদের পরাজিত করেই জিউস দেবতাদের রাজা হন। জিউস ছিলেন মানব বিদ্বেষী দেবতা। যারা মিথ নিয়ে হালকা পরাশুনা করেছে তারা ইতিমদ্ধে জেনে গেছেন জিউস এর নানা নোংরামির কেচ্চা কাহিনী। 

এটা যে সময়ের কাহিনী সেসময়ে পৃথিবীতে মানুষ আগুনের ব্যবহার জানতো না। মানুষ তখন কাঁচা খাবার খেত, বৃষ্টিতে - শীতে অনেক কষ্ট পেত। মানব প্রেমী প্রমিথিউস মানুষের এ কষ্ট দেখে স্বর্গ থেকে আগুন চুরি করে এনে মানুষ কে উপহার দেয়। দেবতারা মানুষকে আগুন দেওয়ার পক্ষপাতি ছিলনা। কারন তারা ভাবত মানুষ আগুন দিয়ে খালি ধ্বংসই করবে। কিন্তু মানব প্রেমী প্রমিথিউস মানুষের কষ্ট দূর করার জন্য মানুষকে আগুন উপহার দেয় এবং এর ব্যবহার শিখিয়ে দেয়। একারনে দেবতারা বিশেষ করে জিউস ভীষণ ভাবে খেপে যান প্রমিথিউস এর উপর। জিউস প্রমিথিউস কে বন্দী করে বেধে রাখলেন এক পাহাড়ের চুরায় এবং শকুন পাঠিয়ে দিলেন। শকুন ঠুকরে ঠুকরে ক্ষত বিক্ষত করতো প্রমিথিউস কে। আবার পরের দিন সেই ক্ষত পূরণ হয়ে যেত এবং শকুন এসে আবার ঠুকরে দিত।  এভাবেই মানব প্রেমের শাস্তি মুখ বুজে সহ্য করতে থাকেন প্রমিথিউস। 

প্রমিথিউস 


প্রমিথিউস কে শাস্তি দেওয়ার পর এবার জিউস মানব জাতিকে শাস্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে। কিন্তু এবার সে অবলম্বন করল একটু কুট কৌশল। জিউস এজন্য দেবী আফ্রোদিতি ও তার স্বামী হেফুস্থস কে ডেকে পাঠালো। হেফুস্থস ছিল স্বর্গের মৃৎ শিল্পী। জিউস হেফুস্থস কে কাদা ও পানি দিয়ে আফ্রোদিতি এর ন্যায় একটি মূর্তি বানাতে নির্দেশ দিলো। হেফুস্থস সাথে সাথে লেগে গেলো মূর্তি নির্মাণে এবং নিমেষেই তৈরি করে ফেললো আফ্রদিতির ন্যায় অসম্ভব সুন্দর এক নারী মূর্তি। হবে না কেন, আফ্রোদিতি যে সৌন্দর্যের দেবী। এবার জিউস এই মূর্তি কে প্রান দিলেন। সাথে সাথে জিউস এর নির্দেশে দেবতা অ্যাপোলো একে দিলো সঙ্গীত, দেবী এথেনা দিলো কাপড়, হারমিস দিলো প্ররচনা। এ কারনে এর নাম রাখা হোলও প্যানডোরা যার অর্থ সর্ব উপহার। সব মিলিয়ে প্যানডোরা পরিনত হোলও অপরুপ সুন্দরি এক রমণীতে। 

এবার জিউস প্যানডোরা কে একটি বাক্স উপহার দিলো যার মধ্যে ভরে দিলো লোভ- লালসা, জরা- জীর্ণ, ক্রোধ, হতাশা। বাক্সটি প্যানডোরা বক্স নামে পরিচিত। প্যানডোরা কে বাক্স উপহার দিয়ে জিউস বলে দিলো বাক্স যাতে না খোলা হয়। প্যানডোরা ও জিউস কে কথা দিলো কখনও খুলবে না বাক্স। এবার জিউস প্যানডোরা কে পৃথিবীর এক জঙ্গলে পাঠিয়ে দিলো যে জায়গা বর্তমানে গ্রিস নামে পরিচিত। পৃথিবীতে পা রাখলো প্রথম নারী। 
 
প্যানডোরা অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সেজে জঙ্গলে একা বসে ছিল। ঐ সময় জঙ্গলের পথ ধরে জাচ্ছিল এপিমেথিউস। প্যানডোরার অতিমানবীয় রূপ বিমোহিত করে তোলে এপিমেথিউস কে। এখানে বলে রাখি এপিমেথিউস ছিলেন মানব প্রেমী প্রমিথিউস এর ভাই। তিনি ছিলেন অত্যন্ত শান্ত শিষ্ট। যাই হোক প্যানডোরার রুপে বিমোহিত হয়ে এপিমেথিউস প্যানডোরা কে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, প্যানডোরা ও রাজি হয়ে যায়। 

প্যানডোরা ও এপিমেথিউস এরপর সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে পৃথিবীর বুকে। কিন্তু ঐ যে কৌতূহল নামক একটা আবেগ আছে যা প্যানডোরা কে বার বার আকর্ষিত করতে থাকে বাক্সটির প্রতি। কিন্তু প্রতিবার ই জিউস কে দেওয়া কথা মনে পড়ে যায় তার। কিন্তু একসময় আর পারে না প্যানডোরা। একদিন এপিমেথিউস যখন বাড়ির বাইরে ছিল তখন প্যানডোরা খুলে ফেলে বাক্স টি। অমনি বাক্স থেকে বেরিয়ে আসে দুঃখ- কষ্ট, রোগ- শোক, লোভ, ঘৃণা এবং ছরিয়ে পড়ে সারা পৃথিবীতে। এভাবেই গ্রীক মিথ মতে প্যানডোরার একটু খানি কৌতূহল এর কারনে সারা পৃথিবীতে নেমে আসে অসান্তির বৃষ্টি যা চলছে এখনো। তবে ভাগ্যিস আশা নামক আবেগটি মানুষের আছে যে কারনে মানুষ আজ ও বেচে আছে সকল অসান্তি উপেক্ষা করে। এভাবেই জিউস সাপ ও মারল লাঠি ও ভাঙল না। সে মানুষ দ্বারা মানুষের ক্ষতি করে দিলো কিন্তু কেও যে তাকে এজন্য দায়ি করবে সে ফাক রাখলো না। 




এভাবেই প্যানডোরা মানব সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলো অনিষ্টের জন্মদাত্রী হিসেবে। আর পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যথার্থ নারীকে যথার্থ নামিয়ে আনল আস্তাকুরে। 


তথ্য সুত্রঃ 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন